Skip to content

Latest commit

 

History

History
78 lines (42 loc) · 8.74 KB

এরা-সুখের-লাগি-চাহে-প্রেম-আহমেদ-খান.md

File metadata and controls

78 lines (42 loc) · 8.74 KB


এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম

আহমেদ খান



সন্ধ্যা সাতটা দশে তিনি এলেন।

আসবেন জানতাম। এ আমার পুরোনো ওষুধ।

নাম মিথিলা মিলি। বয়স ৪০। সুন্দরী। সঙ্গে পোশাকের জৌলুশ, চর্চিত ত্বক। ফলে আসামাত্র, পুরো ক্লাবটারই যেন দম আটকে এল। আমি কেতার সঙ্গে হাতটা উঠালাম। একটু অবাকই হলো মিলি। বলল, আপনার বয়স বেশ কম তো!

হাসলাম—খুব কম না...তেত্রিশ বছর গেছে, কেউ কথা রাখেনি। তবে বয়সটা আপনার চেয়ে একটু বেশিই। অন্তত আপনাকে দেখে তেমনই লাগে!

এই মিথ্যাটুকুতে মিলি আনন্দে আছড়ে পড়ল। অবশ্য সব সময়ই এমনটা হয়। জানতাম, এবারও হবে। কোনার একটা টেবিলে বসতে বসতে বললাম, ‘কফি?’

‘হার্ড কিছু।’

অবাক হলাম না। ঢাকার হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পপতির একজন মানজুর মাসুদের দ্বিতীয় স্ত্রী মিলি। অফুরন্ত সময় আর দেদার অর্থ মানুষকে ভর সন্ধ্যাতেই হার্ডের দিকে নিয়ে যায়। এমনিতে আমি ভদকার লোক, কিন্তু মার্টিনি বলে মিষ্টি করে হাসলাম। ভয়ের কিছু নেই। কার্ড আছে পকেটে। শিল্পপতির কার্ড।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে আমাদের পরিচয় আসলে অকস্মাৎ। যেন হঠাৎই সপ্তাহখানেক আগের রং নাম্বার। দুয়েকবার স্যরির আলাপ। তারপর কমন কিছু পছন্দ। আর আজ এখানে দেখা করতে আসা।

কিন্তু ঘটনাটা আসলে এক সপ্তাহ আগের না। তারও প্রায় এক মাস আগের। যখন একটা দামি মলাটে বাঁধা ফাইল আসে আমার কাছে। ভেতরে ছবি। নানান তথ্য। সবই মিলির। কী খেতে পছন্দ, কোন রং ভালোবাসে থেকে শুরু করে কখন ঘুমাতে যায়—সব বৃত্তান্ত!

মার্টিনি চলে আসে। বরফ উঠিয়ে দিই। তিনটায় থামি। মিলি অবাক, ‘কী করে জানলেন?’

আমি নিজেও ওঠাই তিনটা। বলি, ‘আমার সঙ্গে তো আপনার অনেক মিল। ভাবলাম এটাতেও নিশ্চয় আলাদা হবেন না।’

চকিতে একটা বিষাদ খেলে যায় মিলির চোখে। সেটা আড়াল করতেই বড় করে হেসে ওঠে, ‘চিয়ার্স!’

সেদিনের মতো ওইটুকুই।

দুই.

দ্বিতীয় সপ্তাহে দেখা হওয়াটা প্রতিদিনের হয়ে এল। সম্বোধন আপনি থেকে তুমিতে। অল্প অল্প নাচ। দুয়েকটা সেলফি। অফিসের খাসকামরায় সেলফিগুলো দেখে মানজুর মাসুদের চোখ জ্বলে উঠল। বলল, ‘তুমি তো দেখি ম্যাজিশিয়ান হে...আর কদ্দিন লাগবে?’

‘এক সপ্তাহ!’

‘তাহলেই ভিডিওটা দেবে?’

‘ঠিক যেমনটা চেয়েছেন আপনি।’

‘উফ! নিষ্কৃতি নিষ্কৃতি। একেবারে গলার কাঁটা হয়ে গেছে। ওই ভিডিওর পর ডিভোর্সে আর কোনো বাধা থাকবে না, বুঝলে? কিছু লাগবে তোমার?’

‘আপনার ১০ লাখের ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ঘুরছি, আর কী লাগবে?’

‘আরও ১০ লাখ তোমার অ্যাকাউন্টে যাবে, ডিয়ার ম্যাজিশিয়ান।’

তিন.

যেমন ভেবেছিলাম, তার চেয়েও দ্রুত ঘটতে শুরু করল সব। পরের সপ্তাহের প্রথম দিনেই মিলি বলল, ‘চলো...’

এই চলোর মানে আমি বুঝি। মানজুরকে টেক্সট করলাম, ‘আজই পাচ্ছেন!’

রিপ্লাই এল, ‘ও তোমাকে উত্তরায় নেবে। গো এহেড।’

এরপর অনেকগুলো ভালোবাসার ইমোকটিন। ভালোবাসা কী অদ্ভুত জিনিস; কোথায় না কোথায় কাজে লাগে! 

গাড়ি ঘুরতে থাকে শহরের মধ্যে। পথ থেকে পথে। তারপর জ্যাম ঠেলে উত্তরা। আর উত্তরার পর মধ্যরাতে গাজীপুর।

আধো অন্ধকারের ভেতর দেখা গেল বাংলোটা। মিলি বলল, ‘চিন্তা নেই। গার্ডদের বলা আছে।’

ব্যাগ খুলে পিস্তল বের করল সে। আমার হাতে দিল ঠান্ডা যন্ত্রটা। বলল, ‘তোমার ব্যবহার করা কার্ডের মতো এটাও মানজুরের। যাও, কইয়ের তেলে কই ভেজে আসো।’

কে কই, কে তেল এসবের সঠিক মীমাংসা না করেই ভেতরে ঢুকলাম। গার্ড আমাকে দেখল। তারপর কথামতো ঘুমিয়ে পড়ল।

দরজা হাঁ হয়ে আছে বেডরুমের। ভদকার বোতল উল্টে আছে। চিৎ হয়ে ঘুমাচ্ছেন মানজুর। হাতে ধরা মোবাইল। তাতে আমার পাঠানো ভিডিও। চলতে চলতে থেমে গেছে। থেমে আছেন মানজুরও। নড়ছেন না। মুখে কি গ্যাঁজ?

ভদকার বোতলের পাশে ওষুধের শিশি। আর এপাশে মানজুরের স্পন্দনহীন বুক। একটু দূরেই খোলা তার নোটপ্যাড। কাছে গেলে পড়া যায়। জীবনের মতোই প্যাঁচানো হাতের লেখা মানজুরের, ‘মিলিকে আমি ভালোবাসি। ওকে ক্ষমা করে দিলাম।’

মানজুরের হাতে আমার পাঠানো স্থির ভিডিওটার দিকে আবার আমার চোখ—তাহলে ডিভোর্স না, শুধুই একটা পরীক্ষা?

আমার মেসেঞ্জারে মিলির টেক্সট, ‘গুলির শব্দ কই?’

রিপ্লাইয়ে আমি তাকে ভালোবাসার ইমোকটিন পাঠাই। ভালোবাসা কী অদ্ভুত জিনিস, কোথায় কোথায় না কাজে লাগে!