Skip to content

Latest commit

 

History

History
4 lines (4 loc) · 52.8 KB

ঘড়ি.md

File metadata and controls

4 lines (4 loc) · 52.8 KB

ঘড়ি

সুব্রত মজুমদার

দিন সাতেক ঘোরাঘুরি এবং দরদস্তুরের পর ঘড়িটা কিনেই  ফেলল পল্টন। কাচের সুদৃশ্য বাক্সের মধ্যে ঘড়িটা ভরে উপরে রঙিন কাগজ জড়াতে জড়াতে গুরুপদ বলেছিল, ‘‘তুমি বলেই এই দামে দিলাম। এতে আমার লাভ কিছু থাকল না।’’ 

‘‘একটা ঘড়িতে লাভ নাই বা রাখলে। অন্যগুলোতে পুষিয়ে নিও,’’ পকেট থেকে টাকা বার করতে করতে বলল পল্টন। 

‘‘তাই বললে হয়, তা হলে দোকান চলবে কেন? তবে হ্যাঁ, তোমার কথা আলাদা। তোমার জানাশোনা কেউ থাকলে কম করে দিতে হবে বইকি। এতে দোকান চলল আর না চলল!’’  

ঘড়ির বাক্সটা পকেটে রেখে দোকান থেকে বেরিয়ে পড়ল পল্টন। মনে মনে খুশি হল। গুরুপদদা খুব খাতির করে কথা বলল তো! 

দোকান থেকে বেরিয়ে পল্টনের মনে হল, পকেটে রেখে দেওয়ার জন্য তো সে ঘড়ি কেনেনি। হাতে না পরলে এর মর্ম বোঝা যাবে না। তাড়াতাড়ি পকেট থেকে বার করে হাতে পরে নিল ঘড়িটা। 

‘‘পল্টনবাবু না? চেনাই যাচ্ছে না! হাতে ওটা কী? ও-ব্বাবা! ঘড়িটা আবার কবে কিনলেন?’’ জটাধর কৌতুক ভরা গলায় বলে উঠল। 

রাস্তার ধারে বসে ফল বিক্রি করে জটাধর। তার মোটাসোটা ভারী চেহারার ভিতর থেকে ও রকম সরু গলা বড়ই বেমানান। তবু ওই সরু গলাতেই খদ্দেরদের সঙ্গে বাক-চাতুরি চালিয়ে যায়। 

পল্টন জটাধরের দিকে এক বার তাকাল। তাচ্ছিল্যের দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে ওখান থেকে সরে এল। এদের সঙ্গে কথা বলা বৃথা। নিজেকে ঠিক জটাধরদের পর্যায়ে ফেলতে পারে না সে।  

না ফেলারই কথা। কোথায় জটাধর আর কোথায় পল্টন! রীতিমতো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ডিগ্রি পকেটের মধ্যে আছে। তবে চাকরির ধারে কাছে যাবে না পল্টন। ও সব ছা-পোষা দশটা-পাঁচটার মধ্যে সে নেই। মাথার মধ্যে যে চিন্তার জটটা ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। এতে লোকে তাকে পাগল-ছাগল যা-ই বলুক না কেন, কিছু এসে যায় না। উচ্চ মেধাসম্পন্ন মানুষদের সাধারণ লোক পাগলই বলে থাকে। এই জটাধরের আর দোষ কী।

পল্টন ওর বাঁ হাত চোখের সামনে তুলে ধরল। ছ’টা পাঁচ। এখনও বেশ বিকেল। চৈত্র মাসের উল্টোপাল্টা হাওয়া। ফুরফুরে মেজাজে প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর দেশলাই বার করল পল্টন। একটা সিগারেট মুখের মধ্যে গুঁজে দেশলাই দিয়ে ধরাতে গিয়েও ধরাল না। ঘড়িটা মদনকে এক বার দেখাতে হবে। ব্যাটা সব সময় জ্ঞান দেয়। করিস তো পান-বিড়ির দোকান। ইস্কুলের গণ্ডিও পেরোসনি। এত জ্ঞান দেওয়া কীসের রে! আমার তো তবু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ডিগ্রি আছে। আবার বলে কিনা ডিগ্রি ধুয়ে জল খা! আগে পয়সা রোজগার কর, তার পর ফুটানি করিস। এই ঘড়িটা ওকে না দেখালেই নয়। সিগারেট আর দেশলাই পকেটে রেখে দিল পল্টন।  

সামনেই মদনের পানের দোকান। মদন তখন এক খদ্দেরের পান তৈরিতে ব্যস্ত। 

‘‘জর্দা হবে তো?’’ 

খদ্দের জবাব দেওয়ার আগে পাশ থেকে পল্টন বলল, ‘‘একটা সিগারেট দেখি!’’ 

পল্টন অযথা বাঁ হাত নেড়ে কথাটা বলল। ঘড়িটা পরার পর থেকে তার ওই হাতটা একটু যেন বেশি দুলছে।       

পল্টনের হাত নাড়ানোতে মদনের চোখ ঘড়ির দিকে গেল। একেবারে ঝকঝকে নতুন। এ বার ঘড়ির মালিকের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হল।  

‘‘আরে, ঘড়িটা নতুন কিনলি মনে হচ্ছে?’’  

পল্টন তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বাঁ হাত নাড়ল। আজব বস্তু এই ঘড়ি। অন্তত পল্টন তাই মনে করে। একটা নির্দিষ্ট ছন্দে এর গতিবিধি। আর এই গতিবিধির সঙ্গে তাল রেখে তাবড় বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের চলাফেরা। ছোট্ট এতটুকু এক চাকতির মধ্যে এর প্রাণভোমরা। তার ভিতর থেকে প্রাণস্পন্দন। সেই স্পন্দনের সঙ্গে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এগিয়ে চলা। পল্টন প্রায়ই এখন এক দ্বন্দ্বে পড়ে যায়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে লক্ষ্য করে ঘড়ির কাঁটা চলে, না কি ঘড়ির কাঁটা লক্ষ করে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের চলাফেরা! কার নাকে কে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে? বিরাট এক প্রশ্নচিহ্ন পল্টনের চোখের সামনে। সময় তো এক অনন্ত কাল। যার মাপজোক করা কঠিন। সেই অনন্ত কালের মধ্যে দিয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সন্তরণ। তা হলে সময়ই তো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে নাকে দড়ি দিয়ে নিয়ে চলেছে।  

নাহ্‌, এর উপর কাগজে একটা প্রবন্ধ লিখতে হবে। বাঁ হাতটা কানের কাছে নিয়ে এল পল্টন। ঘড়ির টিকটিক শব্দের সঙ্গে পৃথিবী একটু একটু করে পাল্টে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে সে মহাকালের দিকে। কী অদ্ভুত, কী রহস্য যে আছে এই ঘড়িতে!  

‘‘কি রে, বন্ধ হয়ে গেল না কি?’’ মদন মুচকি হেসে পানটা মুড়িয়ে খদ্দেরকে দিল। 

‘‘বন্ধ ছাড়া কি আর কিছু ভাবতে পারিস না?’’ পল্টন কানের কাছ থেকে হাত নামিয়ে নিল। 

‘‘না, কানের কাছে বার বার হাত নিচ্ছিস, তাই বললাম।’’

‘‘তোরা শুধু বন্ধ আর চলা দেখিস। আর তো কিছু ভাবতে পারিস না। যাকগে, দে একটা সিগারেট।’’

মদন কথা বাড়াল না। সিগারেট বার করে পল্টনের হাতে দিল। কী রকম খ্যাপাটে গোছের যেন পল্টনটা। বাইশ বছর বয়স হল, অথচ অদ্ভুত সব চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সে দিন এসে বলল, ‘‘চোখের সামনে সব কিছু কী রকম পাল্টে যাচ্ছে দেখছিস মদন।’’  

‘‘কী আবার পাল্টে যাচ্ছে? সব কিছু তো ঠিকঠাকই আছে,’’ সিগারেট আর দেশলাই হাতে দিয়ে বলেছিল মদন।  

পল্টন সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া উপরের দিকে ছাড়ল। তার পর খুব চিন্তিত ভাবে বলল, ‘‘সব কিছু খুঁটিয়ে দেখ মদন, তা হলেই বুঝতে পারবি। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পৃথিবীর তাবড় জিনিসের পরিবর্তন ঘটছে। তুই নিজেকেই এক বার আয়নায় নিজেকে ভাল করে দেখ। ক্ষণে ক্ষণে তোর পরিবর্তন ঘটছে। এই যে তুই আজ পঁচিশ-তিরিশ বছরের জোয়ান-মদ্দ হলি, কী ভাবে হলি?’’  

‘‘যেমন ভাবে হয় তেমন ভাবেই হলাম!’’

‘‘সেটাই তো কথা। কী ভাবে? রাতের বেলা বিছানায় শুলি আর সকালবেলা দেখলি, তুই কেমন দাড়ি-গোঁফ নিয়ে মদ্দ-জোয়ান হয়ে গেছিস?’’

‘‘তোকে একটা কথা বলব পল্টন? তুই এ বার একটা কাজ-কাম দেখ। কলেজ-ইউনিভার্সিটির গণ্ডি তো পেরিয়েছিস। চাকরির চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই পাবি। বাপের ঘাড়ে বসে খাচ্ছিস আর উদ্ভট সব চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। কাজের মধ্যে থাক, এগুলো মাথা থেকে উবে যাবে।’’ 

‘‘না রে মদন, বিষয়টা খুব জটিল। ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সব কিছু পাল্টে যাচ্ছে। এই ঘড়িই পরিবর্তনের মূল কারণ। চন্দ্র-সূর্য উঠছে ঘড়ির কাঁটা ধরে। জোয়ার-ভাটা হচ্ছে ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে। কী আশ্চর্য এই ঘড়ি বল তো? আবার দেখ, তোর মুখের বলিরেখাও কী রকম পাল্টে যাচ্ছে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে। আয়না দিয়ে নিজেকে এক বার ভাল করে দেখ। ছিলি জোয়ান-মদ্দ, হয়ে যাচ্ছিস বুড়োটে। এই ঘড়ির কাঁটা ধরেই তো?’’ 

‘‘আচ্ছা ধর, পৃথিবীর সব ঘড়ি যদি একসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া যায় তা হলে কোনও কিছুরই তো আর পরিবর্তন হবে না। সূর্য ঠিক যেখানে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে। তুই-আমি কোনও দিন বুড়ো হব না। কী দারুণ হবে এক বার ভেবে দেখ,’’ মদন কিছুটা উস্কে দিয়েছিল।   

‘‘সেটি হওয়ার নয়,’’ বিজ্ঞের মতো ঘাড় নেড়েছিল পল্টন। ‘‘ঘড়ি যে দিন থামবে পৃথিবী সে দিন ধ্বংস হবে। তুই-আমি কেউই আর বেঁচেবর্তে থাকব না।’’  

মদন সে দিনও কথা বাড়ায়নি, আজও বাড়াল না। কোনও লাভ নেই। এর মাথায় পোকা আছে। না হলে চাকরির চেষ্টা না করে উদ্ভট চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়ায়! শুধু তাই নয়, ফলাও করে আবার লোকের কাছে বলেও বেড়ায়। 

মদনের কাছ থেকে সিগারেট নিয়ে আর এক বার ঘড়ির দিকে তাকাল পল্টন। সন্ধে সাতটা। তার মানে আধ ঘণ্টা কাটল মদনের দোকানে। এই আধ ঘণ্টায় পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।     

রাস্তায় লোক চলাচল বেড়েছে। দোকানে ফুটপাতে লোক যেন হামলে পড়ছে। কেষ্টর সঙ্গে নিমাইয়ের ফুটপাতে বসা নিয়ে একটা ছোটখাটো হাতাহাতিও হয়ে গেল। কেষ্ট ছ’ইঞ্চি নিমাইয়ের জায়গায় নিজের আনাজপাতি ছড়িয়ে রেখেছে। তাই নিয়ে বচসা এবং হাতাহাতি।  

দোকান থেকে বেরিয়ে পড়ল পল্টন। এক বার চিত্রা সিনেমা হলের দিকে যাওয়া দরকার। সময়ের সঙ্গে কত কী যে ঘটে যাচ্ছে সেখানে, একটু চাক্ষুষ করা যাক।   

সন্ধের শো শেষ হয়েছে। গিজগিজ করছে লোক। হল থেকে বেরিয়ে চারদিকে সব ছড়িয়ে পড়ছে, যার যে দিকে যাওয়ার। পল্টনের মনে হয়, এরা নিশ্চয়ই নিজের ইচ্ছেয় কেউ যাচ্ছে না। সময়ের অদৃশ্য সুতোর টানে চলেছে। কিছু বুঝতেও তারা পারছে না।  

‘‘আরে পল্টনদা, তুমি এখানে হাঁ করে দাঁড়িয়ে কী দেখছ?’’ 

বিন্তি ওর ছোট বোনের সঙ্গে হাতে একটা ঠোঙা নিয়ে পল্টনের দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। ভারী ফাজিল এই বিন্তি মেয়েটা। সামনের বছর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা, অথচ দেখে কে বলবে! সারা দিন আড্ডা দিয়ে বেড়ায়।  

‘‘আমার দিকে হাঁ-করে তাকিয়ে আছ কেন? যেন নতুন দেখছ!’’ হিহি করে হাসতে লাগল বিন্তি। 

‘‘ও হ্যাঁ, তুই... হঠাৎ এ দিকে, কী মনে করে?’’   

‘‘তেলেভাজা কিনতে এসেছিলাম। খাবে না কি, একদম গরম,’’ ঠোঙা থেকে একটা গরম তেলেভাজা বার করে পল্টনের হাতে দিল বিন্তি। 

বিন্তির বোন খেন্তি কটকট করে উঠল, ‘‘দিয়ে দিলি যে, আমাদের কম পড়বে না!’’

এই খেন্তিটা হল আরও বিচ্ছু। বছর দশেক বয়স অথচ কটকট করে কী কথা! 

পল্টন অবশ্য খেন্তির কথার গুরুত্ব দিল না। এমন হাতে-গরম তেলেভাজা একটা পুঁচকে মেয়ের কথায় ফেরত দিয়ে দেবে, এমন আহাম্মক সে নয়।  

গরম তেলেভাজায় একটা কামড় বসিয়ে পল্টন বলল, ‘‘হ্যাঁ রে বিন্তি, তুই এত আড্ডা দিয়ে বেড়াস কেন রে? পরীক্ষায় পাশ করতে পারবি?’’

‘‘তেলেভাজাটা কী রকম খেতে পল্টনদা?’’ বিন্তি ভুরু নাচিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করল। 

‘‘তুই রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছেলেদের সঙ্গে গল্প করছিস? দাঁড়া, মাকে গিয়ে বলছি,’’ খেন্তি কটকট করে উঠল। 

‘‘তুই কিন্তু আমার কথার জবাব দিলি না বিন্তি,’’ পল্টন তেলেভাজায় আর একটা কামড় দিল। বেড়ে করে কিন্তু তেলেভাজাগুলো।   

‘‘ও মা, ঘড়িটা বুঝি নতুন কিনেছ? কী সুন্দর দেখতে!’’ বিন্তি উচ্ছ্বসিত হল। 

পল্টন ঘড়ির দিকে এক বার তাকাল। ঘড়ির কাঁটা ঘুরে চলেছে। ঘুরে চলেছে সব কিছু। পৃথিবীর যা কিছু আছে— পার্থিব, অপার্থিব— সব চলেছে এক নির্দিষ্ট যাত্রায়। যার যেখানে যাওয়ার। এই বিন্তিটারও হয়তো এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে এখানেই আসার কথা, পল্টনের সামনে। তা হলে বিন্তির বোধহয় কোনও দোষ নেই।  

তেলেভাজার শেষ টুকরোটা মুখের মধ্যে পুরে হাত থেকে ঘড়িটা খুলে ফেলল পল্টন। তার পর খেন্তির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘পরবি নাকি খেন্তি ঘড়িটা?’’ 

‘‘তোমার ঘড়ি কেন পরবো?’’

‘‘পর না, পরলে তোকে খুব সুন্দর লাগবে।’’  

পল্টন খেন্তির হাতে ঘড়িটা পরিয়ে দিল। খেন্তি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘‘বিন্তি, তুই পল্টনদার সঙ্গে কথা বলতে পারিস। মাকে আজকের মতো কিছু বলব না।’’   

বিন্তি বলল, ‘‘তুমি কি আমাদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেবে?’’  

বিন্তি মেয়েটা আড্ডা দিতে পারে ঠিকই, তবে ভীষণ সরল-সোজা। চেহারাতেও বেশ চটক আছে। হাঁটু ছোঁয়া গাঢ় লাল স্কার্টের উপর দুধসাদা টপ, পায়ে হালকা স্লিপারে দারুণ মানিয়েছে ওকে। চৈত্রের সন্ধের দমকা বাতাসে বিন্তির মুখের উপর চুলগুলো খেলা করতে লাগল। অবাধ্য চুলগুলোর মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে কপাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল সে। পল্টন বিন্তির দিকে তাকিয়ে ভাবল, আজকে কেন ওকে এত সুন্দর দেখাচ্ছে! আগে তো দেখাত না! না কি সে নিজেই ভাল করে বিন্তিকে দেখেনি! তা হলে এটাও কী ঘড়ির প্রাণস্পন্দনের  সঙ্গে যুক্ত? যে সময়ে দেখতে পাওয়ার, সেই সময়েই দেখতে পাওয়া যাবে?   

‘‘ক্যাবলার মতো কী দেখছ আমার মুখে?’’   

পল্টন আমতা আমতা করে বলল, ‘‘আচ্ছা বিন্তি, তোর বাড়িটা যদি একটু ঘুরপথে যাওয়া যায়, আপত্তি আছে?’’ 

বিন্তি ভুরু কুঁচকে বলল, ‘‘তা হলে বাড়ির দুরত্ব যে বেড়ে যাবে!’’  

‘‘বাড়ুক না, তাতে যদি তোর-আমার দূরত্ব কিছুটা কমে আসে, ক্ষতি কী?’’

বিন্তি খেন্তির দিকে তাকাল। খেন্তি ঘড়ি-পরা হাতটা কানের কাছে নিয়ে ঘড়ির শব্দ শুনতে শুনতে বলল, ‘‘আজকের মতো মাকে কিছু বলব না।’’